সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা সদর ইউনিয়নের শিবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাদকসেবী শৈলেন চন্দ্র তালুকদারের ক্ষমতার দাপট, সহকর্মী শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে অসদাচরণ এবং বিদ্যালয়ে প্রায় সময়ই অনুপস্থিতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। তার অশালীন আচরণে ও স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরাসহ স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ। বারবার তার বিরুদ্ধে উধর্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে সে দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে পাঠদানে অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় কোন এক সময় এসে স্বাক্ষর করলেও দেখার যেন কেহ নেই। প্রতিষ্ঠানের বাকি শিক্ষকরা তার এমন অসদাচরণের প্রতিবাদ করলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ তিনি হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। তার অশালীন আচরণের শিকার হয়ে ঠিকমত শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করাতে পারছেন না অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকারা।
তার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে অত্র বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চিন্তাহরণ চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক কাবেরী চৌধুরী ও রুবী রাণী তালুকদার গত ২০ জানুয়ারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও ১৮ ফেব্রুয়ারী সিলেটের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বরাবরে আলাদা লিখিত অভিযোগ দাযের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক শৈলেন চন্দ্র তালুকদারের বাড়ির পাশে বিদ্যালয় হওয়ায় নিজের ইচ্ছেমত বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেন তিনি এবং স্কুল চলাকালীন সময় দায়িত্ব ফেলে বেশিরভাগ সময় কাটান বাড়িতে গিয়ে। তিনি স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে প্রায় সময়ই খারাপ আচরণ ও তাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। তার মতের বিরুদ্ধে কেউ অবস্থান করলে তার সাথে অসদাচরণ করতে ও দ্বিধাবোধ করেন না শৈলেন চন্দ্র তালুকদার। অভিযোগে আরো জানা যায়, গত ১ জানুয়ারী থেকে ৩ জানুয়ারী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন শৈলেন তালুকদার। বিনা অনুমতিতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষক হাজিরা খাতায় মার্ক করে রাখেন বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষরা। কিন্তু হাজিরা খাতায় লাল কালিতে মার্ক দেখে শিক্ষক শৈলেন শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন এবং গত ৫ ফেব্রুয়ারী হাজিরা খাতা জোরপূর্বক বাড়িতে নিয়ে গিয়ে উপস্থিতির স্বাক্ষর করেন। একই কারণে তিনি শিক্ষক হাজিরা খাতা ছিড়ে ফেলে দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাধিকবার লাঞ্ছিত করার অভিযোগ করা হয়েছে শৈলেন তালুকদারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ২০০৪ সালে তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি শৈলেনকে বরখাস্থ করা ও হয়েছিল। তিনি প্রায় সময় স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজে হস্তক্ষেপ করে থাকেন। তার অসদাচরণ ও একাধিকবার শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার কারণে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চিন্তাহরণ চৌধুরী বিদ্যালয় সম্পর্কিত নানা বিষয়ে অভিযুক্ত করে শৈলেন চন্দ্র তারুকদারের বিরুদ্ধে শাল্লা থানায় মামলাও দায়ের করেছেন। তার আচরণে ও স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সকল সদস্যরা।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি নিবারণ তালুকদার বলেন সহকারী শিক্ষর শৈলেন চন্দ্র তালুকদারের স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ আমরা। ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বরাবরে অভিযোগ করা হলেও কেন যে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার ও প্রশাসনের উধর্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানান।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শৈলেন চন্দ্র তালুকদারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আনিত অবিযোগটি মিথ্যা দাবী করে বলেন, ২০১৮ সালে বার্ষিক পরীক্ষার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ তিন শিক্ষক ৮/৯ দিন অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে হাজিরা খাতায় উনারা স্বাক্ষর করে নেন। তিনি এবং তার পরিবার ঐ প্রতিষ্ঠানের দাতা দাবী করে আরো বলেন, আমি নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থেকে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জিল্লুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং তদন্তে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।